সৌরভ মন্ডলঃ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় প্রকাশ্যে জুয়া-হাউজি কমে গেছে। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করে অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। এটাকে নাম দেয়া হয়েছে- অনলাইন জুয়ার আসর। বিভিন্ন অ্যাপ খুলে চালানো হচ্ছে অনলাইন জুয়া। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়। এতে দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্র, বেকার যুবক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা এসব খেলায় জড়িয়ে যাচ্ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহল বশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অনলাইন জুয়া সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থীরা। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড। এখন সেটাও সহজলভ্য(নগত বা বিকাশ) হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ে অনলাইন জুয়ার দিকে। এক সময় তারা এ খেলায় আসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
খুলনার দাকোপের বাজুয়া, চালনা, লাউডোব, বানিশান্তা, কৈলাশগঞ্জ ,পানখালিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিশোর ও যুব সমাজ ভয়াল অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিকেল থেকেই চায়ের দোকান, খেয়াঘাট, ভ্যানস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন মোড় গরম থাকে অনলাইন জুয়া খেলায়। জুয়াড়িরা মনে করে এতে কোন ঝামেলাই নেই। কারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলে এ খেলা। যা প্রশাসনের নজরে আসে না। এদিকে এলাকার উঠতি কিশোর ও যুবকেরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবকরা আছে চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায়। কারণ জুয়ার টাকা যোগাতে অনেকে পরিবারের পকেট কাটছে, আবার অনেকে চুরির মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েক যুবক বলেন, এই জুয়া খেলতে লাগে অনলাইন জুয়ার এ্যাপস এবং এ্যাপস ইনস্টল করার পর লাগে টাকা। এই টাকা রির্চাজ করতে মধ্যসত্ত¡ ভোগি এজেন্টের কাছ যেতে হয়। এতে করে লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্ত¡ ভোগি এজেন্টরা আর ধ্বংস হচ্ছে কিশোর ও যুব সমাজ। এজেন্টের যত একাউন্ট হবে ততো বেশি লাভ। কারণ এই টাকা রিচার্জ করতে কাটা হয় কমিশন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুবক বলেন, অনলাইনের এই জুয়া খেলাটা অন্ধকারে খেলার মতো। বাঁধলে বাজিমাত, না বাঁধলে কুপোকাত। তারপরও অনেকেই সহজে বড়লোক হওয়ার আশায় বাজি ধরে। যারা খেলে তারাও জানে না যে কারা এ্যাপসটা নিয়ন্ত্রণ করছে। টাকা কখন আসছে, কখন যাচ্ছে। হারলে মনে হচ্ছে, পরের দানেই পাব। জিতলে মনে হয়, আরেকবার ধরে দেখি, বাঁধতেও তো পারে। সব মিলিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সময় চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা পড়েছি বিপদে। ছেলে মেয়েরা গেম খেলছে নাকি জুয়া খেলছে বুঝতে পারছি না। বাড়ি থেকে টাকা চুরি করে মোবাইলে রির্চাজ করে এই গেম খেলছে। টাকা না দিতে চাইলে করছে অশান্তি।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন মহল্যায় এই ভয়াল নেশা অনলাইন জুয়া যাতে না খেলে তার জন্য বলি। অনলাইন জুয়া খেলে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে গ্রামের অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা। এই ভয়াল নেশা (অনলাইন জুয়া) থেকে রক্ষা পেতে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের’ পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগ পেলেই সাইটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে এ অপরাধের দায়ে অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অনলাইন জুয়াবিষয়ক একটি আইন করার প্রস্তুতি চলছে। আইন হয়ে গেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরো ভালোভাবে কাজ করা যাবে।
প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে নতুন সাইট। গেমভিত্তিক মোবাইল অ্যাপসও আছে বলে জানা গেছে। তাই কিশোর-কিশোরীরাও এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্মে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এরই মধ্যে চক্রের অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। বন্ধ করা হচ্ছে সাইট। যারা এখনও সক্রিয় তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে গত জুলাই মাসে চার হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন নামে-বেনামে জুয়ার সাইট খুলে বসে। এখনো প্রায় শতাধিক জুয়ার সাইট রয়েছে বলে জানা গেছে।

Post a Comment